বর্তমান ডিজিটাল যুগে স্মার্টফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে রাতে ঘুমানোর আগ মুহূর্তে স্মার্টফোন স্ক্রল করা অনেকের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। তবে গবেষণা বলছে, গভীর রাতে স্মার্টফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকা আপনার স্বাস্থ্য এবং মানসিক সুস্থতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
ঘুমের সমস্যা এবং ক্লান্তির কারণ
রাতে অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম ঘুমের মান নষ্ট করতে পারে। এতে আপনি সকালে ক্লান্তি, খিটখিটে মেজাজ এবং মানসিক অবসাদ অনুভব করতে পারেন। এছাড়া, দীর্ঘমেয়াদে এটি আপনার ঘুমের রুটিন নষ্ট করে অনিদ্রা, উচ্চ রক্তচাপ এবং উদ্বেগের মতো সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
নীল আলো এবং মেলাটোনিন উৎপাদন
স্মার্টফোন, ল্যাপটপ এবং অন্যান্য ডিজিটাল স্ক্রিন থেকে নির্গত নীল আলো মস্তিষ্কে ঘুমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হরমোন মেলাটোনিনের উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে সহজেই ঘুমিয়ে পড়া কঠিন হয়ে যায়। হার্ভার্ড হেলথ পাবলিশিংয়ের গবেষণা অনুসারে, নীল আলো সবুজ আলোর তুলনায় দ্বিগুণ বেশি সময় ধরে মেলাটোনিন দমন করতে পারে, যা সার্কাডিয়ান রিদম বা শরীরের অভ্যন্তরীণ ঘড়ির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব
সোশ্যাল মিডিয়ায় অতিরিক্ত সময় ব্যয় করা এবং নেতিবাচক বা আবেগপ্রবণ কনটেন্ট দেখা মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। এতে উদ্বেগ, চাপ এবং বিষণ্ণতা বাড়তে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে মানসিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করে দিতে পারে।
স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগের ওপর প্রভাব
গভীর রাত পর্যন্ত স্ক্রলিং করলে আপনার স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ নষ্ট হতে পারে। এতে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পায় এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। পাশাপাশি এটি মস্তিষ্কের সৃজনশীলতা ও সমস্যার সমাধানের দক্ষতাকেও প্রভাবিত করে।
কী করা উচিত?
১. ঘুমানোর অন্তত তিন ঘণ্টা আগে স্ক্রিন ব্যবহার বন্ধ করুন। ২. ঘুমানোর আগে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। ৩. প্রশান্তিদায়ক সঙ্গীত শোনা সহায়ক হতে পারে। ৪. সর্বদা নাইট মোড ব্যবহার করুন এবং উত্তেজক কনটেন্ট দেখা থেকে বিরত থাকুন।
স্মার্টফোন আমাদের জীবনে অনেক সুবিধা নিয়ে এসেছে, তবে অতিরিক্ত এবং অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার আমাদের স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই নিজের সুস্থতা নিশ্চিত করতে স্ক্রিন টাইমের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা অত্যন্ত জরুরি।