দৈনিক ১ এক ঘণ্টা স্মার্টফোন ব্যবহারে অজান্তেই কি ক্ষতি হচ্ছে দেখুন

বর্তমান যুগে স্মার্টফোনের ব্যবহার সর্বত্র বিস্তৃত। তবে অতিরিক্ত স্মার্টফোন বা ডিজিটাল স্ক্রিনের ব্যবহার শরীরের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে, যা অনেকেই অবহেলা করে থাকেন। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন মাত্র এক ঘণ্টা স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট ব্যবহারের ফলে মায়োপিয়ার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে। মায়োপিয়া বা কাছের বস্তু স্পষ্ট দেখা গেলেও দূরের জিনিস ঝাপসা দেখার প্রবণতা বিশ্বব্যাপী বেড়ে চলেছে।

গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল

ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আমেরিকার মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের জার্নাল জামা নেটওয়ার্ক ওপেন-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় প্রতিদিন এক ঘণ্টার বেশি ডিজিটাল স্ক্রিন ব্যবহারের ফলে মায়োপিয়ার ঝুঁকি ২১ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে বলে জানানো হয়েছে।

গবেষকেরা ৪৫টি ভিন্ন গবেষণা পর্যালোচনা করে ৩ লাখ ৩৫ হাজারেরও বেশি মানুষের স্ক্রিন ব্যবহারের সময় ও মায়োপিয়ার মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করেছেন। এই গবেষণা বিশেষ করে শিশু ও তরুণদের ওপর চালানো হয়।

ঝুঁকির মাত্রা ও সময়ের সম্পর্ক

গবেষণায় উঠে এসেছে, প্রতিদিন স্ক্রিন ব্যবহারের সময়ের সঙ্গে মায়োপিয়ার ঝুঁকির একটি নির্দিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। যারা প্রতিদিন এক ঘণ্টার কম সময় স্ক্রিন ব্যবহার করে, তাদের ঝুঁকি তুলনামূলক কম থাকে। তবে চার ঘণ্টা পর্যন্ত স্ক্রিন ব্যবহারের ফলে এই ঝুঁকি ধাপে ধাপে বৃদ্ধি পায়।

গবেষকদের মতে, যারা প্রতিদিন এক ঘণ্টা স্ক্রিন ব্যবহার করেন, তাদের মায়োপিয়ার ঝুঁকি ৫ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে, যারা চার ঘণ্টা পর্যন্ত স্ক্রিন ব্যবহার করেন, তাদের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি ৯৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।

স্ক্রিন ব্যবহারের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব

গবেষকেরা সতর্ক করে বলেছেন, দীর্ঘ সময় স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে শুধু চোখ নয়, শরীরের অন্যান্য অংশেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। অতিরিক্ত স্ক্রিন ব্যবহারের ফলে মস্তিষ্কের কগনিটিভ কার্যক্ষমতা যেমন স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ প্রভাবিত হতে পারে, যার ফলে মনোযোগের স্থায়িত্ব কমে যায়।

এছাড়াও, অস্বস্তিকর ভঙ্গিতে বসার কারণে শারীরিক সমস্যা যেমন মেরুদণ্ডের ব্যথা, স্থূলতা, ও পিঠের ব্যথা দেখা দিতে পারে। দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

বিশ্বজুড়ে মায়োপিয়ার বিস্তার ও সমাধানের উপায়

গবেষকেরা মনে করেন, বিশ্বজুড়ে মায়োপিয়া মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। এই গবেষণার ফলাফল চিকিৎসকদের জন্য মায়োপিয়া প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিতে পারে। অ্যাংলিয়া রাস্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রুপার্ট বোর্ন বলেন, ‘সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, মায়োপিয়ার বৃদ্ধি দৃষ্টিশক্তিকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই গবেষণার ফলাফল শিক্ষা ও জনস্বাস্থ্যের কৌশল নির্ধারণে সহায়ক হতে পারে, যা বিশ্বব্যাপী মায়োপিয়া সমস্যার সমাধানে সাহায্য করবে।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার ও নিয়মিত চোখের যত্নের মাধ্যমে এই ঝুঁকি কমানো সম্ভব। দীর্ঘক্ষণ স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার পরিবর্তে মাঝে মাঝে বিরতি নেওয়া, প্রাকৃতিক আলোতে বেশি সময় ব্যয় করা ও চোখের সুরক্ষার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

Follow Realme Bangladesh on Facebook.

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top